বুধবার, ২৮ মে, ২০১৪

হুমায়ূন আজাদ এর বিখ্যাত উক্তি (দুই)

১। এদেশের মুসলমান এক সময় মুসলমান বাঙালি, তারপর বাঙালি মুসলামান, তারপর বাঙালি হয়েছিলো; এখন আবার তারা বাঙালি থেকে বাঙালি মুসলমান, বাঙালি মুসলমান থেকে মুসলমান বাঙালি, এবং মুসলমান বাঙালি থেকে মুসলমান হচ্ছে। পৌত্রের ঔরষে জন্ম নিচ্ছে পিতামহ।
২। নিন্দুকেরা পুরোপুরি অসৎ হ’তে পারেন না, কিছুটা সততা তাঁদের পেশার জন্যে অপরিহার্য; কিন্তু প্রশংসাকারীদের পেশার জন্য মিথ্যাচারই যথেষ্ট।
৩। বাস্তব কাজ অনেক সহজ অবাস্তব কাজের থেকে ; আট ঘন্টা একটানা শ্রম গাধাও করতে পারে,কিন্তু একটানা এক ঘন্টা স্বপ্ন দেখা রবীন্দ্রনাথের পক্ষেও অসম্ভব।
৪। প্রতিটি সার্থক প্রেমের কবিতা বলতে বোঝায় যে কবি প্রেমিকাকে পায় নি, প্রতিটি ব্যর্থ প্রেমের কবিতা বোঝায় যে কবি প্রেমিকাকে বিয়ে করেছে।
৫। তৃতীয় বিশ্বের নেতা হওয়ার জন্যে দুটি জিনিশ দরকার : বন্দুক ও কবর।
৬। প্রতিটি বিজ্ঞাপনে পণ্যটির থেকে পণ্যাটি অনেক লোভনীয়; তাই ব্যর্থ হচ্ছে বিজ্ঞাপনগুলো।দর্শকেরা পণ্যের থেকে পণ্যাটিকেই কিনতে ও ব্যবহার করতে অধিক আগ্রহ বোধ করে।
৭। কোন দেশের লাঙলের রূপ দেখেই বোঝা যায় ওই দেশের মেয়েরা কেমন নাচে, কবিরা কেমন কবিতা লেখেন, বিজ্ঞানীরা কি আবিষ্কার করেন, আর রাজনীতিকেরা কতোটা চুরি করে।
৮। যারা ধর্মের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেয়, তারা ধার্মিকও নয়, বিজ্ঞানীও নয়। শুরুতেই স্বর্গ থেকে যাকে বিতারিত করা হয়েছিলো, তারা তার বংশধর।
৯। যতোদিন মানুষ অসৎ থাকে, ততোদিন তার কোনো শত্রু থাকে না; কিন্তু যেই সে সৎ হয়ে উঠে,তার শত্রুর অভাব থাকে না।
১০। এদেশে সবাই শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবক : দারোগার শোকসংবাদেও লেখা হয়, ‘তিনি শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবক ছিলেন’।



১১। শিল্পকলা হচ্ছে নিরর্থক জীবনকে অর্থপূর্ণ করার ব্যর্থ প্রয়াস।
১২। কিছু বিশেষন ও বিশেষ্য পরস্পরসম্পর্কিত; বিশেষ্যটি এলে বিশেষন আসে, বিশেষন এলে বিশেষ্য আসে। তারপর একসময় একটি ব্যবহার করলেই অন্যটি বোঝায়, দুটি একসাথে ব্যবহার করতে হয় না। যেমন : ভন্ড বললেই পীর আসে, আবার পীর বলতেই ভন্ড আসে। এখন আর ‘ভন্ড পীর’ বলতে হয় না; ‘পীর’ বললেই ‘ ভন্ড পীর ’ বোঝায়।
১৩। ভক্ত শব্দের অর্থ খাদ্য। প্রতিটি ভক্ত তার গুরুর খাদ্য। তাই ভক্তরা দিনদিন জীর্ণ থেকে জীর্ণতর হয়ে আবর্জনায় পরিণত হয়।
১৪। মূর্তি ভাঙতে লাগে মেরুদন্ড, মূর্তিপূজা করতে লাগে মেরুদন্ডহীনতা।
১৫। আমাদের সমাজ যাকে কোনো মূল্য দেয় না, প্রকাশ্যে তার অকুণ্ঠ প্রশংসা করে, আর যাকে মূল্য দেয় প্রকাশ্যে তার নিন্দা করে। শিক্ষকের কোনো মূল্য নেই, তাই তার প্রশংসায় সমাজ পঞ্চমুখ; চোর,দারোগা, কালোবাজারি সমাজে অত্যন্ত মুল্যবান, তাই প্রকাশ্যে সবাই তাদের নিন্দা করে।
১৬। সৌন্দর্য রাজনীতির থেকে সব সময়ই উৎকৃষ্ট।
১৭। ক্ষুধা ও সৌন্দর্যবোধের মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। যে-সব দেশে অধিকাংশ মানুষ অনাহারী,সেখানে মাংসল হওয়া রূপসীর লক্ষণ; যে-সব দেশে প্রচুর খাদ্য আছে, সেখানে মেদহীন হওয়া রূপসীর লক্ষণ। এজন্যেই হিন্দি আর বাঙলা ফিল্মের নায়িকাদের দেহ থেকে মাংস চর্বি উপচে পড়ে। ক্ষুধার্ত দর্শকেরা সিনামা দেখে না, মাংস ও চর্বি দেখে ক্ষুধা নিবৃত্ত করে।
১৮। বাঞ্ছিতদের সাথে সময় কাটাতে চাইলে বই খুলুন, অবাঞ্ছিতদের সাথে সময় কাটাতে চাইলে টেলিভিশন খুলুন।
১৯। স্তবস্তুতি মানুষকে নষ্ট করে। একটি শিশুকে বেশি স্তুতি করুন, সে কয়েকদিনে পাক্কা শয়তান হয়ে উঠবে। একটি নেতাকে স্তুতি করুন, কয়েকদিনের মধ্যে দেশকে সে একটি একনায়ক উপহার দেবে।
২০। ধনীরা যে মানুষ হয় না, তার কারণ ওরা কখনো নিজের অন্তরে যায় না। দুঃখ পেলে ওরা ব্যাংকক যায়, আনন্দে ওরা আমেরিকা যায়। কখনো ওরা নিজের অন্তরে যাতে পারে না, কেননা অন্তরে কোনো বিমান যায় না।
২১। রাজনীতি ও সংস্কৃতি সম্পুর্ণ বিপরীত বস্তু ; একটি ব্যাধি অপরটি স্বাস্থ্য।
২২। আগে প্রতিভাবানেরা বিদেশ যেতো; এখন প্রতিভাবানেরা নিয়মিত বিদেশ যায়।
২৩। বিশ্বের নারী নেতারা নারীদের প্রতিনিধি নয় ; তারা সবাই রুগ্ন পিতৃতন্ত্রের প্রিয় সেবাদাসী।
২৪। কোন বাঙালি আজ পর্যন্ত আত্মজীবনী লেখে নি, কেননা আত্মজীবনী লেখার জন্যে দরকার সততা।বাঙালির আত্মজীবনী হচ্ছে শয়তানের লেখা ফেরেশতার আত্মজীবনী।
২৫। কারো প্রতি শ্রদ্ধা অটুট রাখার উপায় হচ্ছে তার সাথে কখনো সাক্ষাৎ না করা।
২৬। মানুষের তুলনায় আর সবই ক্ষুদ্র : আকাশ তার পায়ের নিচে, চাঁদ তার এক পদক্ষেপের দূরত্বে,মহাজগত তার নিজের বাড়ি।
২৭। পুরুষ তার পুরুষ বিধাতার হাতে লিখিয়ে নিয়েছে নিজের রচনা; বিধাতা হয়ে উঠেছে পুরুষের প্রস্তুত বিধানের শ্রুতিলিপিকর।
২৮। হিন্দু বিধানে পুরুষ দ্বারা দূষিত না হওয়া পর্যন্ত নারী পরিশুদ্ধ হয় না!
২৯। সব ধরনের অভিনয়ের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হচ্ছে রাজনীতি; রাজনীতিকেরা অভিনয় করে সবচেয়ে বড় মঞ্চে ও পর্দায়।
৩০। উচ্চপদে না বসলে এদেশে কেউ মূল্য পায় না। সক্রেটিস এদেশে জন্ম নিলে তাঁকে কোনো একাডেমির মহাপরিচালক পদের জন্যে তদ্বির চালাতে হতো।
৩১। সক্রেটিস বলেছেন তিনি দশ সহস্র গর্দভ দ্বারা পরিবৃত। এখন থাকলে তিনি ওই সংখ্যার ডানে কটি শূন্য যোগ করতেন?
৩২। বাঙালি মুসলমান জীবিত প্রতিভাকে লাশে পরিনত করে, আর মৃত প্রতিভার কবরে আগরবাতি জ্বালে।
৩৩। নজরুলসাহিত্যের আলোচকেরা সমালোচক নন, তাঁরা নজরুলের মাজারের খাদেম।
৩৪। ভ্রষ্ট বাঙালিকে ভালোবাসার শ্রেষ্ঠ উপায় তার গালে শক্ত ক’রে একটি চড় কষিয়ে দেয়া।
৩৫। বাঙালির জাতিগত আলস্য ধরা পড়ে ভাষায়। বাঙালি ‘দেরি করে’, ‘চুরি করে’, এমনকি ‘বিশ্রাম করে’। বিশ্রাম ও বাঙালির কাছে কাজ।
৩৬। বাঙালি অভদ্র, তার পরিচয় রয়েছে বাঙালির ভাষায়। কেউ এলে বাঙালি জিজ্ঞেস করে, ‘কি চাই?’বাঙালির কাছে আগন্তুক মাত্রই ভিক্ষুক। অপেক্ষা করার অনুরোধ জানিয়ে বাঙালি বলে, ‘দাঁড়ান’। বসতে বলার সৌজন্যটুকুও বাঙালির নেই।
৩৭। মানুষ মরণশীল, বাঙালি অপমরণশীল।
৩৮। গণশৌচাগার দেখলেই কেনো যেনো আমার বাঙালির আত্মাটির কথা বারবার মনে পড়ে।
৩৯। বিনয়ীরা সুবিধাবাদী, সুবিধাবাদীরা বিনয়ী।
৪০। দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম প্রেম বলে কিছু নেই। মানুষ যখন প্রেমে পড়ে, তখন প্রতিটি প্রেমই প্রথম প্রেম।
৪১। মার্ক্সবাদের কথা শুনলে এখন মোল্লারা ক্ষেপে না, সমাজতন্ত্রের কথা তারা সন্েতাষের সাথেই শোনে; কিন্তু শরীরের কথা শুনলে লম্পটরাও ধর্মযুদ্ধে নামে।
৪২। এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো।
৪৩। খুব ভেবে চিনতে মানুষ আত্মসমর্পন করে, আর অনুপ্রাণিত মুহুর্তে ঘোষনা করা স্বাধীনতা।
৪৪। মানুষ যখন তার শ্রেষ্ঠ স্বপ্নটি দেখে তখনি সে বাস করে তার শ্রেষ্ঠ সময়ে।
৪৫। এ ব-দ্বীপে দালালি ছাড়া ফুল ফোটে না, মেঘও নামে না।
৪৬। আমার লেখার যে অংশ পাঠককে তৃপ্তি দেয়, সেটুকু বর্তমানের জন্যে; আর যে অংশ তাদের ক্ষুব্দ করে সেটুকু ভবিষ্যতের জন্য।
৪৭। বাঙলার বিবেক খুবই সন্দেহজনক। বাঙলার চুয়াত্তরের বিবেক সাতাত্তরে পরিনত হয় সামরিক একনায়কের সেবাদাসে।
৪৮। বাঙলাদেশ অমরদের দেশ। এ-দেশের প্রতি বর্গমিটার মাটির নিচে পাঁচজন ক’রে অমর ঘুমিয়ে আছেন।
৪৯। পাকিস্থানের ইতিহাস ঘাতক আর শহীদদের ইতিহাস। বাঙলাদেশের ইতিহাস শহীদ আর ঘাতকদের ইতিহাস।
৫০। একবার রাজাকার মানে চিরকাল রাজাকার; কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা মানে চিরকাল মুক্তিযোদ্ধা নয়।
৫১। বাঙলার প্রতিটি ক্ষমতাদখলকারী দল সংখ্যাগরিষ্ঠ দুর্বৃত্তের সংঘ।
৫২। পৃথিবীতে একটি মাত্র দক্ষিনপন্থী সাম্যবাদী দল রয়েছে। সেটি আছে বাঙলাদেশে।
৫৩। আমাদের প্রায়-প্রতিটি মার্ক্সবাদী তাত্ত্বিকের ভেতরে একটি ক’রে মৌলবাদী বাস করে। তারা পান করাকে পাপ মনে করে, প্রেমকে গুনাহ মনে করে, কিন্তু চারখান বিবাহকে আপত্তিকর মনে করে না।
৫৪। কবিতা এখন দু-রকম; দালালি, ও গালাগালি।
৫৫। বাঙলাদেশের সাহিত্যে আধুনিকতাপর্বের পর কি আসবে আধুনিকতা-উত্তর-পর্ব? না। আসতে দেখছি গ্রাম্যতার পর্ব।
৫৬। পৃথিবী জুড়ে সমাজতন্ত্রের সাম্প্রতিক দুরবস্থার সম্ভবত গভীর ফ্রয়েডীয় কারণ আছে। সমাজতন্ত্রের মার্ক্সীয়, লেলিনীয়, স্তালিনীয় আবেদন ছিলো, কিন্তু যৌনাবেদন ছিলো না।
৫৭। স্বার্থ সিংহকে খচ্চরে আর বিপ্লবীকে ক্লীবে পরিনত করে।
৫৮। অপন্যাস হচ্ছে সে-ধরনের সাহিত্য, যা বছরে লাখ টন উৎপাদিত হ’লেও সাহিত্যের কোনো উপকার হয় না; আর আধ কেজি উৎপাদিত না হ’লেও কোনো ক্ষতি হয় না।
৫৯। সৎ মানুষ মাত্রই নিঃসঙ্গ, আর সকলের আক্রমনের লক্ষ বস্তু।
৬০। মধ্যবিত্ত পতিতাদের নিয়ে সমস্যা হচ্ছে তারা পতিতাদের সুখ ও সতীর পূন্য দুটিই দাবি করে।
৬১। বিপ্লবীদের বেশি দিন বাঁচা ঠিক নয়। বেশি বাঁচলেই তারা প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে উঠে।
৬২। পুঁজিবাদী পর্বের সবচেয়ে বড়ো ও জনপ্রিয় কুসংস্কারের নাম প্রেম।
৬৩। জীবনের সারকথা কবর।
৬৪। শাড়ি প’রে শুধু শুয়ে থাকা যায়; এজন্যে বাঙালি নারীদের হাঁটা হচ্ছে চলমান শোয়া।
৬৫। শ্বাশত প্রেম একজনের শরীরে ঢুকে আরেকজনের স্বপ্ন দেখা।
৬৬। প্রেম হচ্ছে নিরন্তর অনিশ্চয়তা; বিয়ে ও সংসার হচ্ছে চূড়ান্ত নিশ্চিন্তির মধ্যে আহার, নিদ্রা, সঙ্গম,সন্তান, ও শয়তানি।
৬৭। ইতিহাস হচ্ছে বিজয়ীর হাতে লেখা বিজিতের নামে এক রাশ কুৎসা।
৬৮। পুরুষতান্ত্রিক সভ্যতার শ্রেষ্ঠ শহীদের নাম মা।
৬৯। গত দু-শো বছরে গবাদিপশুর অবস্থার যতোটা উন্নতি ঘটেছে নারীর অবস্থার ততোটা উন্নতি ঘটে নি।
৭০। টাকাই অধিকাংশ মানুষের একমাত্র ইন্দ্রিয়।
৭১। মৃত সিংহের থেকে জীবিত গাধাও কতো জোতির্ময় উজ্জ্বল।
৭২। মানুষ মরলে লাশ হয়, সংস্কৃতি মরলে প্রথা হয়।
৭৩। আমি বেঁচে ছিলাম অন্যদের সময়ে।
৭৪। পৃথিবীর প্রধান বিশ্বাসগুলো অপবিশ্বাস মাত্র। বিশ্বাসীরা অপবিশ্বাসী।
৭৫। ঐতিহ্য বলতে এখানে লাশকেই বোঝায়। তবে লাশ জীবনকে কিছুই দিতে পারে না।
৭৬। গাধা একশো বছর বাঁচলেও সিংহ হয় না।
৭৭। আমি ঈর্ষা করি শুধু তাদের যারা আজো জন্মে নি।
৭৮। সতীচ্ছদ আরব পুরুষদের জাতীয় পতাকা।
৭৯। সবচেয়ে হাস্যকর কথা হচ্ছে একদিন আমরা কেউ থাকব না।
৮০। পাপ কোনো অন্যায় নয়, অপরাধ অন্যায়। পাপ ব্যক্তিগত, তাতে সমাজের বা অন্যের, এমনকি পাপীর নিজেরও কোনো ক্ষতি হয় না; কিন্তু অপরাধ সামাজিক, তাতে উপকার হয় অপরাধীর, আর ক্ষতি হয় অন্যের বা সমাজের।
৮১। ক্ষমতায় থাকার সময় যারা সত্য প্রকাশ করতে দেয় না, ক্ষমতা হারানোর পর তারা অজ্রস্য মিথ্যার প্রকাশ রোধ করতে দেয় না।
৮২। শিশু, সবুজ, তরুনীরা আছে ব’লে বেঁচে থাকা আজো আমার কাছে আপত্তিকর হয়ে উঠে নি।
৮৩। পশু আর পাখিরাই মানবিক।
৮৪। ক্ষমতায় যাওয়ার একটিই উপায়; সমস্যা সৃষ্টি করা। সমস্যা সমাধান ক’রে কেউ ক্ষমতায় যায় না,যায় সৃষ্টি করে।
৮৫। পৃথিবীতে রাজনীতি থাকবেই। নইলে ওই অপদার্থ অসৎ লোভী দুষ্ট লোকগুলো কি করবে?
৮৬। ঋষি রবীন্দ্রনাথের ছবি দেখলে বাল্যকাল থেকেই তাঁর জন্মাব্দ ১৮৬১র আগে দুটি বর্ণ যোগ করতে ইচ্ছে হয়। বর্ণ দুটি হচ্ছে খ্রিপূ।
৮৭। এখানে সাংবাদিকতা হচ্ছে নিউজপ্রিন্ট-বলপয়েন্ট-মিথ্যার পাচঁন।
৮৮। ফুলের জীবন বড়োই করুণ। অধিকাংশ ফুল অগোচরেই ঝ’রে যায়, আর বাকিগুলো ঝোলে শয়তানের গলায়।
৮৯। টেলিভিশনে জাহাজমার্কা আলকাতরার বিজ্ঞাপনটি আকর্ষনীয়, তাৎপর্যপূর্ণ; তবে অসম্পুর্ন।বিজ্ঞাপনটিতে জালে, জাহাজে, টিনের চালে আলকাতরা লাগানোর উপকারিতার কথা বলা হয়; কিন্তু বলা উচিত ছিলো যে জাহাজ মার্কা আলকাতরা লাগানোর উৎকৃষ্টতম স্থান হচ্ছে টেলিভিশনের পর্দা।,বিশেষ ক’রে যখন বাঙলাদেশ টেলিভিশনের অনুষ্ঠান দেখা যায়।
৯০। আমাদের অধিকাংশের চরিত্র এতো নির্মল যে তার নিরপেক্ষ বর্ণনা দিলেও মনে হয় অশ্লীল গালাগাল করা হচ্ছে।
৯১। মোল্লারা পবিত্র ধর্মকেই নষ্ট ক’রে ফেলেছে; ওরা হাতে রাষ্ট্র পেলে তাকে জাহান্নাম ক’রে তুলবে ।
৯২। বিধাতা মৌলবাদী নয়। কে প্রার্থনা করলো, কে করলো না; কে কোন তরুনীর গ্রীবার দিকে তাকালো, কোন রূপসী তার রূপের কতো অংশ দেখালো, এসব তাকে বিন্দুমাত্র উদ্বিগ্ন করে না। কিন্তু বিধাতার পক্ষে এতে ভীষন উদ্বিগ্ন বোধ করে ভন্ডরা।
৯৩। মসজিদ ভাঙে ধার্মিকেরা, মন্দির ভাঙে ধার্মিকেরা, তারপরও তারা দাবি করে তারা ধার্মিক, আর যারা ভাঙাভাঙিতে নেই তারা অধার্মিক বা নাস্তিক।
৯৪। মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায় আসে না; যায় আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
৯৫। মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি। কিন্তু ওরা তাকে চালায় ধর্মের নামে।
৯৬। মসজিদ ও মন্দির ভাঙার সময় একটি সত্য দীপ্ত হয়ে উঠে যে আল্লা ও ভগবান কতো নিõিয়,কতো অনুপস্থিত।
৯৭। ধার্মিক কখনোই সম্পুর্ন মানুষ নয়, অনেক সময় মানুষই নয়।
৯৮। ধর্মের কাজ মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা; তাই এক ধার্মিকের রক্তে সব সময়ই গোপনে শানানো হ’তে থাকে অন্য ধার্মিককে জবাই করার ছুরিকা।
৯৯। একটি ধর্মান্ধের মুখের দিকে তাকালেই বোঝা যায় আল্লা অমন লোককে পছন্দ করতে পারে না।
১০০। মৌলবাদ হচ্ছে আল্লার নামে শয়তানবাদ।
১০১। শয়তানই আজকাল আল্লা আর ঈশ্বরের নাম নিচ্ছে প্রাণ ভ’রে। আদিম শয়তান আর যাই হোক রাজনীতিবিদ ছিলো না, কিন্তু শয়তান এখন রাজনীতি শিখেছে; আল্লা আর ঈশ্বর আর জেসাসের নামে দিনরাত শ্লোগান দিচ্ছে।
১০২। মানুষের উৎপত্তি সম্পর্কে দুটি তত্ত্ব রয়েছে : অবৈজ্ঞানিকটি অধঃপতনতত্ত্ব, বৈজ্ঞানিকটি বিবর্তনতত্ত্ব। অধঃপতনতত্ত্বের সার কথা মানুষ স্বর্গ থেকে অধঃপতিত। বিবর্তনতত্ত্বের সারকথা মানুষ বিবির্তনের উৎকর্ষের ফল। অধঃপতনবাদীরা অধঃপতনতত্ত্বে বিশ্বাস করে; আমি যেহেতু মানুষের উৎকর্ষে বিশ্বাস করি, তাই বিশ্বাস করি বিবর্তনতত্ত্বে। অধঃপতন থেকে উৎকর্ষ সব সময়ই উৎকৃষ্ট।
১০৩। মসলামানের মুক্তি ঘটে নি, কারণ তারা অতীত ও তাদের মহাপুরুষদের সম্পর্কে কোনো সত্যনিষ্ঠ আলোচনা করতে দেয় না।
১০৪। ভাবাদর্শগত জীবন হচ্ছে বন্দি জীবন। মানুষ জীবন যাপনের জন্যে জন্মেছে, ভাবাদর্শ যাপনের জন্যে জন্মে নি।
১০৫। গান্ধি দাবি করেন যে তিনি একই সাথে হিন্দু, খ্রিষ্টান, মুসলমান, বৌদ্ধ, ইহুদি, কনফুসীয় ইত্যাদি। একে তিনি ও তাঁর অনুসারীরা মহৎ ব্যাপার ব’লে মনে করেছেন। কিন্তু এটা প্রতারণা, ও ভয়ঙ্কর ব্যাপার,-তিনি নিজেকে ক’রে তুলেছেন সব ধরনের খারাপের সমষ্টি। এমন প্রতারণা থেকেই উৎপত্তি হয়েছে বাবরি মসজিদ উপাখ্যানের। তিনি যদি বলতেন, আমি হিন্দু নই, মুসলমান নই, বৌদ্ধ নই, ইহুদি নই, কনফুসীয় নই; আমি মানুষ, তাহলে বাবরি মসজিদ উপখ্যানের সম্ভাবনা অনেক কমতো।
১০৬। ভারতীয় সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের আধুনিক উৎস মোহনচাঁদ করমচাঁদ গান্ধী।
১০৭। একটি আমলা আর মন্ত্রীর সাথে পাঁচ মিনিট কাটানোর পর জীবনের প্রতি ঘেন্না ধ’রে গেলো;তারপর একটি চড়ুইয়ের সাথে দু-মুহুর্ত কাটিয়ে জীবনকে আবার ভালবাসলাম।
১০৮। শরীরই শ্রেষ্ঠতম সুখের আকর। গোলাপের পাপড়ির উপর লক্ষ বছর শুয়ে থেকে, মধুরতম দ্রাক্ষার সুরা কোটি বছর পান ক’রে, শ্রেষ্ঠতম সঙ্গীত সহস্র বছর উপভোগ ক’রে যতোখানি সুখ পাওয়া যায়, তার চেয়ে অর্বুদগুন বেশি সুখ মেলে কয়েক মুহুর্ত শরীর মন্থন ক’রে।
১০৯। বিভূতিভূষনের পথের পাঁচালীর পাশে সত্যজিতের চলচিত্রটি খুবই শোচনীয় বস্তু, ওটি তৈরি না হ’লেও ক্ষতি ছিলো না; কিন্তু বিভূতিভূষন যদি পথের পাঁচালী না লিখতেন, তাহলে ক্ষতি হতো সভ্যতার।
১১০। সত্যজিত যদি ভারতরত্ন হন, তবে বিভূতিভূষন বিশ্বরত্ন, সভ্যতারত্ন; কিন্তু অসভ্য প্রচারের যুগে মহৎ বিভূতিভূষণকে পৃথিবী কেনো ভারত চেনে না, চেনে গৌণ সত্যজিৎকে।
১১১। কোন কালে এক কদর্য কাছিম দৌড়ে হারিয়েছিলো এক খরগোশকে, সে গল্পে কয়েক হাজার ধ’রে মানুষ মুখর। তারপর খরগোশ কতো সহস্রবার হারিয়েছে কাছিমকে, সে-কথা কেউ বলে না।
১১২। সত্য একবার বলতে হয়; সত্য বারবার বললে মিথ্যার মতো শোনায়। মিথ্যা বারবার বলতে হয়;মিথ্যা বারবার বললে সত্য ব’লে মনে হয়।
১১৩। শোনা যায় পুরোনো কালে ঘটতো নানা অলৌকিক ঘটনা, তবে পুরোনো কালের অলৌকিকঘটনাগুলো বানানো বা ভোজবাজি। প্রকৃত অলৌকিক ঘটনার কাল হচ্ছে বিশশতক। পুরোনো কালের কোনো মোজেজ লাঠিকে সাপ বানাতে, বা সমুদ্রের উপর সড়ক তৈরি করতে পারতেন-ক্ষণিকের জন্যে।ওগুলো নিম্নমানের যাদু। সত্য স্থায়ী অলৌকিকতা সৃষ্টি করতে পেরেছে শুধু বিশশতকের বিজ্ঞান। বিদুৎ,বিমান, টেলিভিশন, কম্পিউটার, নভোযান, এমনকি সামান্য শেলাইকলটিও অতীতের যে কোন অলৌকিক ঘটনার চেয়ে অনেক বেশি অলৌকিক। বিজ্ঞান অলৌকিকতাকে সত্যে পরিণত করেছে ব’লে গাধাও তাতে বিষ্মিত হয় না, কিন্তু পুরোনো তুচ্ছ অলৌকিকতার কথায় সবাই বিহ্বল হয়ে উঠে। ১১৪। পুরোনো কালের মানুষ যদি দৈবাৎ একটি টেলিভিশনের সামনে এসে পড়তো, তাহলে তাকে দেবতা মনে ক’রে পুজো করতো। আজো সেই পুজো চলতো।
১১৫। আজকালকার আধিকাংশ পি এইচ ডি অভিসন্দর্ভই আশার আলো জ্বালায়; মনে হয় এখানেই নিহিত আমাদের শিক্ষাসমস্যা সমাধানের বীজ। প্রথম বর্ষ অনার্স শ্রেনীতেই এখন পি এইচ ডি কোর্স চালু করা সম্ভব, এতে ছাত্ররা আড়াই বছরে একটি ডক্টরেট ডিগ্রি পেতে পারে। এখানকার অধিকাংশ ডক্টরেটই øাতক পূর্ব ডক্টরেট; অদূর ভবিষ্যতে উচ্চমাধ্যমিক ডক্টরেটও পাওয়া যাবে।
১১৬। পৃথিবীতে যতোদিন অন্তত একজনও প্রথাবিরোধী মানুষ থাকবে, ততোদিন পৃথিবী মানুষের।

1 মন্তব্য(গুলি):

 

Blogger news

Blogroll

About